Logo
Logo
×

জাতীয়

বৃহস্পতিবার ক্লাসে আসতে ‘নিরুৎসাহিত’ করছে অনেক স্কুল

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৪০ পিএম

বৃহস্পতিবার ক্লাসে আসতে ‘নিরুৎসাহিত’ করছে অনেক স্কুল
কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের ডাকা ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। নিরাপত্তা শঙ্কায় অনেক অভিভাবক সন্তানকে স্কুলে পাঠানো নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে নিরুৎসাহিত করেছে রাজধানীর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বন্ধ রাখার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ কৌশলে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না’ উল্লেখ করে নোটিশ দিয়েছে। এছাড়া অনেক স্কুলের ক্লাস পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১২ নভেম্বর) বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবক, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

উদ্বিগ্ন অনেক অভিভাবক, স্কুল বন্ধ রাখার দাবিঅভিভাবকরা জানান, ১৩ নভেম্বর ঘিরে সবার মধ্যেই উদ্বেগ ছড়িয়েছে। গত দুদিন ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গাড়িতে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব কারণে তারা উদ্বিগ্ন। রাজনৈতিক অস্থিরতায় সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যাতায়াতে ভয় পাচ্ছেন তারা।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক দিনা আশরাফ স্কুলটির নামে চালু করা একটি ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন, ‘স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি, সরকারি নির্দেশনার অপেক্ষায় না থেকে আমাদের সবার বাচ্চাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আগামীকাল ১৩ নভেম্বর স্কুলটা বন্ধ রাখলে ভালো হতো।’

তিনি আরও লেখেন, ‘বছরের শেষের দিকে এখন প্রতিটা ক্লাসই বাচ্চাদের জন্য অনেক জরুরি। আর সবার আগে আমাদের সবার নিরাপত্তার কথা ভাবা উচিত। তাছাড়া অনেকেই অনেক দূর থেকে স্কুলে আসে। আশা রাখি, স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো বিশেষভাবে বিবেচনা করবেন।’

তার পোস্টের নিচে শরীফ সরদার নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘আপনার স্কুলে আসতে কেউ বাধ্য করছে নাকি যে স্কুলে আসতেই হবে।’ তার প্রতিউত্তরে দিনা আশরাফ লেখেন, ‘আমার বাচ্চা রেগুলার স্টুডেন্ট। সে হিসাবমতে একদিন স্কুল বন্ধ দিলে তার জন্য অনেক কষ্টের।’

হাসিনা আক্তার নামে আরেক অভিভাবক লিখেছেন, ‘প্র্যাকটিক্যাল এক্সাম (ব্যবহারিক পরীক্ষা)। না গিয়ে উপায় কী?’

স্কুল খোলা, তবে ক্লাসে আসা বাধ্যতামূলক নয়!অভিভাবকদের উদ্বেগ থাকলেও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে কৌশলে স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের নিয়ে চালু করা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে অভ্যন্তরীণভাবে কৌশলি বার্তা দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার একটি শ্রেণির অভিভাবকদের একটি গ্রুপে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘আগামীকাল ১৩/১১/২৫ তা‌রিখ দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠানোর জন্য অভিভাবকদের বলা যাচ্ছে না। কোনোরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায়ভার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেবে না।’

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির কুইজ পরীক্ষা ছিল ১৩ নভেম্বর। তবে আজ বুধবার এক নোটিশে তা স্থগিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগমের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত ১৩ নভেম্বর তারিখের একাদশ শ্রেণির কুইজ পরীক্ষা আগামী ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

অন্যদিকে, সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের বারিধারা শাখায় ক্লাস বন্ধ রাখার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য বৃহস্পতিবার ক্লাস বন্ধ থাকবে বলে অভ্যন্তরীণ নোটিশে উল্লেখ করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক বা প্রধান গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি। তারা জানান, অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীরাও ভয় পাচ্ছে।

‘কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সরকারের পক্ষ থেকে চাপ আসতে পারে। সেজন্য তারা মৌখিকভাবে এবং অভ্যন্তরীণ ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার জন্য জানিয়ে দিচ্ছেন। কেউ যদি এদিন স্কুলে না আসে তাহলে তাকে জরিমানা করা হবে না। কাউকে বাধ্য করাও হবে না- এমন তথ্যও অভিভাবকদের অবগত করে দেওয়া হচ্ছে’—বলছেন তারা।

জানতে চাইলে মাউশির মাধ্যমিক বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল বলেন, ‘কয়েকদিন পরই বার্ষিক পরীক্ষা। এ সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এমন নয় যে, স্কুল বন্ধ রাখতে হবে। অতীতে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেও ক্লাস হয়েছে। সে হিসাবে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা দেখছি না।’

‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় আছে। আশা করি, শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবে ক্লাস করতে পারবে’—বলছেন মাউশির এ কর্মকর্তা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার