Logo
Logo
×

জাতীয়

১৪ মাসে বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড ৪০, গণপিটুনিতে মৃত্যু ১৫৩

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২৭ পিএম

১৪ মাসে বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড ৪০, গণপিটুনিতে মৃত্যু ১৫৩

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৪০ জন। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ (Odhikar) জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৪ মাস অতিক্রম করলেও, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড মোট ৪০টি। এর মধ্যে নির্যাতনে মৃত্যু ১৪, গুলিতে নিহত ১৯, পিটিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন ৭ জন।

অধিকার বলেছে, ২০২৫ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ১১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩ জন পুলিশের হাতে, ১ জন সেনাবাহিনীর হাতে এবং ৭ জন যৌথবাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩ জনকে নির্যাতনে, ৬ জনকে গুলিতে এবং ২ জন পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের আগস্টের ৯ তারিখের পর ওই মাসে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। সেপ্টেম্বরে ৯ জনের পর অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে একজন করে এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এরপর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মারা যান ৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন। মার্চ ও এপ্রিল মাসে মারা যান একজন করে দুজন। এরপর মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যকাণ্ডের শিকারের সংখ্যা যথাক্রমে ৪,৩, ৬,৩ ও ২।

অধিকার হিসাব অনুযায়ী, গত ১৪ মাসে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ২৪২টি। এর মধ্যে আহত হয়েছেন ১২৯ জন, নিহত ১, লাঞ্ছিত ৪৩, আক্রমণ ৫, হুমকির শিকার ৩১ এবং মামলার শিকার ৩৩ জন।

অধিকার-এর সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ১ জন নিহত, ৩৪ জন আহত, ১১ জন লাঞ্ছিত, ৯ জন হুমকির শিকার ও ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

এ ছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৭ হাজার ৯৭৯টি। এর মধ্যে নিহত ২৮১, আহত ৭ হাজার ৬৯৮ জন। এ ছাড়া চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ৪৬ জন নিহত ও ১ হাজার ৫৩৭ জন আহত হয়েছেন। এই তিন মাসে বিএনপির ৮২টি ও আওয়ামী লীগের ১টি অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ৮ জন নিহত ও ৭৪০ জন আহত এবং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে এ বছরের মার্চে, ৯৪৪ টি। ৮৬২টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। গত বছরের আগস্টে (৯–৩১ আগস্ট) সংখ্যাটি ছিল ৫০০। ৭৯৮টি ঘটনা ঘটে এ বছরের এপ্রিলে। গত জুন, জুলাই ও আগস্টে সংখ্যাটি ছিল যথাক্রমে ৪৮৯,৫৭৯ ও ৬৫৮। গত সেপ্টেম্বরে সংখ্যাটি নেমে দাঁড়ায় ৩০০ টিতে।

১৪ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হন ২৮১ জন। সবচেয়ে বেশি ব্যক্তি নিহত হন এ বছরের মার্চে ৪৪ জন, এরপর এক মাসে বেশি নিহত হন গত বছরের আগস্টের ২৩ দিনে, ৩৩ জন।

১৪ মাসে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে ১৫৩ জনের। এই ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গত সেপ্টেম্বরে, ১৮ টি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ ঘটনা ছিল ১৭ টি। গত তিন মাসে এমন ঘটনার সংখ্যা ৪৫ টি।

গত তিন মাসে ১৮৮ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭৭ জন নারী এবং ১১১ জন মেয়ে শিশু। ওই ৭৭ জন নারীর মধ্যে ১৮ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ২ জন ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন। ১১১ জন কন্যাশিশুর মধ্যে ১৩ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ৬ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৮ জন নারী ও মেয়ে শিশু যৌন হয়রানির (উত্ত্যক্তকরণ) শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া নারী ও শিশুদের ওপর সংঘটিত যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ২ জন পুরুষ আহত হয়েছেন এবং ৩ জন নারী নিহত হয়েছেন।

গত তিন মাসে মোট ১২ জন নারী যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ০৬ জন নারীকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে, ৫ জন বিভিন্নভাবে নিপীড়নের শিকার এবং ১ জন আত্মহত্যা করেছেন।

উল্লেখিত এক বছরে সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে ৩৫ জন বাংলাদেশি, আহত হয়েছেন ৩৪ জন এবং পুশইন করা হয়েছে ২ হাজার ৩৩৩ জনকে। অবশ্য পুশইনের ঘটনাগুলো ঘটেছে চলতি বছরের মে মাস থেকে।

এ ছাড়া চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ১০ বাংলাদেশী নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়েছেন। নিহত ১০ জনের মধ্যে ০৭ জনকে গুলি করে হত্যা ও ০৩ জনকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১০ জনকে গুলি করে ও ০৪ জনকে নির্যাতন করে আহত করা হয়েছে।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও অধিকার এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সীমান্ত এলাকার মানবাধিকার কর্মীদের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ ৫৪৪ জনকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার