Logo
Logo
×

জাতীয়

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিবের ড্রাইভারের ৩১ লাখ টাকার সেতু!

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:২৫ এএম

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিবের ড্রাইভারের ৩১ লাখ টাকার সেতু!

শরীয়তপুরের ডামুড্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিবের গাড়িচালকের পুকুরে প্রবেশের সুবিধার জন্য সরকারি অর্থে ৩১ লাখ টাকায় একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে না করে ব্যক্তি স্বার্থে এমন সেতু নির্মাণ করাকে স্থানীয়রা দেখছেন ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হিসেবে। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘ওপর মহলের নির্দেশে’ বাধ্য হয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

এলজিইডি শরীয়তপুর সূত্রে জানা গেছে, জেলার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (এমএসআরডিপি) আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডামুড্যা উপজেলার চরধানকাটি আদাসন দরবার শরীফ সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। ৩১ লাখ ১২ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে কাজটি সম্পন্ন করে মিনহাজ ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যে স্থানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে আশপাশে কোনো বসতবাড়ি নেই। খালের ওপাশে রয়েছে একটি বড় পুকুর, যার পাশ দিয়ে যাতায়াতের কোনো সড়কও নেই। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিবের গাড়িচালক মোকসেদ সরদার ওই পুকুরের মালিক এবং ভবিষ্যতে সেখানে বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তার ব্যক্তিগত স্বার্থে এবং বিশেষ তদবিরে এই সেতুটি নির্মিত হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জনগণের কাজে লাগার মতো কোনো স্থানে নয়, বরং একেবারে অপ্রয়োজনীয় জায়গায় সরকারি অর্থে এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয়দের ক্ষোভ

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, একত্রিশ লাখ টাকা নষ্ট করে একদম অপ্রয়োজনীয় জায়গায় এই ব্রিজ করা হয়েছে। এই ব্রিজ দিয়ে কোনো মানুষ চলাচল করে না। সামনে শুধু দুইটা পুকুর আছে। এটা কোনো প্রভাবশালী লোক নিজের স্বার্থে করেছে। এটা সম্পূর্ণ অন্যায়। সরকারের টাকা যারা এভাবে নষ্ট করছে, তাদের বিচার চাই।

আরেকজন বলেন, যেখানে এই ব্রিজ বানানো হয়েছে, সেখানে কোনো ঘরবাড়ি নেই। সামনেই শুধু একটা পুকুর। অথচ খালের ওপারে যেখানে লোকজন বাস করে, সেখানে তারা এখনো সাঁকো ব্যবহার করছে। এই ব্রিজ এমন জায়গায় নির্মাণ করা উচিত ছিল, যেখানে সবাই এর সুফল পেতো।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত চালক মোকসেদ সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখানে বাড়ি নির্মাণ করবো। এ ছাড়া তিনি আর কোনো মন্তব্য করেননি।

ডামুড্যা উপজেলা প্রকৌশলী আবু নাঈম নাবিল বলেন, আমরা উপজেলা থেকে এমন কোনো প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠাইনি। ওই গাড়িচালক সচিবকে দিয়ে তদবির করে বিষয়টি ঢুকিয়েছে। পরে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) চিঠি পাঠান এটি বাস্তবায়নের জন্য। আমরা পিডিকে জানিয়েছিলাম এটি আমাদের প্রকল্পের আওতাভুক্ত নয়। পরে পিডি নিজে ফোন করে জানায়, হেড অফিস থেকে নির্দেশ এসেছে কাজটি সম্পন্ন করতে। আমি চাকরিজীবী, তাই বাধ্য হয়েই কাজটি করেছি।

এলজিইডি শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী এস.এম. রাফেউল ইসলাম বলেন, ব্যক্তি স্বার্থে কোনো ব্রিজ দেওয়া হয়নি। তখন বলা হয়েছিল, এর পাশ দিয়ে একটি রাস্তা তৈরি করে গ্রামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা স্থানীয় সরকারের অধীনে কাজ করি, যেখানে জনপ্রতিনিধিরা যে প্রস্তাব দেন, তা গ্রহণ করেই আমাদের কাজ করতে হয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার