Logo
Logo
×

জাতীয়

কয়েক কোটি টাকা দিলেও হাসিনার ইন্টারভিউ আমি করবো না : কাজী জেসিন

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:০৮ এএম

কয়েক কোটি টাকা দিলেও হাসিনার ইন্টারভিউ আমি করবো না : কাজী জেসিন

ভয়ানক ঘৃণার ভাষাকে মঞ্চ দেওয়া যায় না, উল্লেখ করে সাংবাদিক এবং লেখিকা কাজী জেসিন জানান, হাসিনার ইন্টারভিউ আমি সুযোগ পেলেও করবো না, এমনকি কয়েক কোটি টাকা দিলেও না।

বুধবার ২৯ অক্টোবর তার ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেইজের এক পোস্টে  একথা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, “খুনির সাক্ষাৎকার নেয়া যাবে না তা না। সাংবাদিকতার এথিক্স এটা বলে না যে, আপনি খুনির সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন না। একজন খুনির সাক্ষাৎকার নেয়ার মধ্য দিয়ে যদি আমি সমাজ, রাষ্ট্র ব্যবস্থার ত্রুটি তুলে ধরতে পারি, যদি সেই সাক্ষাৎকার জনস্বার্থে অত্যাবশ্যক হয় (উদাহরণ: অপরাধের পেছনের নেটওয়ার্ক বুঝাতে বা ভবিষ্যৎ অপরাধ রোধে ভূমিকা রাখে) তাহলে তা নেয়া যায়।”

পোস্টে তিনি লেখেন, তথ্য সাংবাদিকের কাছে খনি। কিন্তু এই খনি আহরণ করতে গিয়ে কোনো সাংবাদিক দেশের ক্ষতি করার রাইট রাখেন না।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, নরওয়ের অ্যান্ডার্স ব্রেইভিক, ২০১১ সালে ৭৭ জনকে হত্যা করে। তার বিচার চলাকালীন অনেক সংবাদমাধ্যম তার “আইডিওলোজি” বা বক্তব্য ছাপতে চেয়েছিল। কিন্তু নরওয়ের আদালত ও সাংবাদিকতার নীতি-সংস্থা নির্দেশ দেয়, “ব্রেইভিক -এর বক্তব্য প্রচার করা মানে তার ঘৃণার ভাষাকে মঞ্চ দেওয়া।” ফলে অধিকাংশ মিডিয়া তার সাক্ষাৎকার সরাসরি প্রচার করতে পারেনি। তাইলে খুনি হাসিনার সাক্ষাৎকার নেয়া যাবে না।

কাজী জেসিন তার পোস্টে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার না নেয়ার জন্য তিনটি কারন উল্লেখ করে বলেন, প্রথমত হাসিনা সম্পর্কে আমরা জানি, যে সে কোনো অপরাধের নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে খুন করে নাই, বরং তিনি নিজেই মাফিয়া ছিলেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়ে কোন বৃহৎ জনকল্যাণ সাধিত হবে না কিংবা সে এমন কোনো সত্য তুলে ধরবে না, যা এড্রেস করার মধ্য দিয়ে সমাজে বা রাষ্ট্রে অব্যবস্থাপনা দূর হবে। তাহলে খুনি হাসিনার সাক্ষাৎকার আমি কেন নেবো? এথিক্যালি আমি তা করতে পারি না।

তিনি তার পোস্টে উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হান্না আরেন্ট ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল নিয়ে লিখেছিলেন, “যখন মন্দকে একটি মঞ্চ দেওয়া হয়, তখন তা সহানুভূতির জন্য নয়, বরং তার প্রক্রিয়া বোঝার জন্য হওয়া উচিত।” অর্থাৎ অপরাধীর কণ্ঠ শোনা যেতে পারে বোঝার উদ্দেশ্যে, কিন্তু সহানুভূতির উদ্দেশ্যে নয়। হাসিনার কাছে বোঝার কিছু নাই যে, কেন সে এতো মানুষকে এমনকি শিশুকে হত্যা করলো। সে এক রক্ত পিপাসু ক্ষমতালোভি ভয়ানক ফ্যাসিস্ট!

পোস্টে তিনি লেখেন, ১৯৩০-এর দশকে যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক জর্জ ওয়ার্ড প্রাইস হিটলারের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। এই সাক্ষাৎকার নেয়ার পর তিনি ভয়ানকভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন, কারণ এক ভয়ানক হত্যাকারীর অপরাধের ভয়াবহতার ব্যাখ্যা দিতে, নিজের ভালো (ভ্রান্ত) দিক তুলে ধরতে সেই সাক্ষাৎকার সহযোগিতা করেছিল। সেটাই করার কথা, কারণ একজন খুনীর সাক্ষাৎকার নেয়া মানেই আপনি তার অপকর্মের ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ দিচ্ছেন অথবা তাকে মিথ্যা বয়ানের সুযোগ হাজির করছেন।

কাজী জেসিন তার পোস্টে হাসিনার সাক্ষাৎকার না নেয়ার দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, হাসিনার বিচারের আগে হত্যা সংক্রান্ত আলাপে তার দেয়া মিথ্যা তথ্য (যেহেতু সে সত্য বলে না) তার অনুসারীদের ভেতরে বিভ্রম সৃষ্টি করতে পারে, যাদের তিনি ইতিমধ্যে প্রতিপক্ষের ওপর হামলার হুকুম দিয়েছেন, তাদের বাড়িঘরে আগুন দিতে বলেছেন। এইসব মতিভ্রম নেতাকর্মীরা আরও বিভ্রান্ত হয়ে ভবিষ্যতে কি করতে পারে অনুমান করে নেন।

তিনি লেখেন, “আমরা নিশ্চয়ই একটা সিভিল ওয়ার সিচুয়েশন চাই না! মাফিয়া, প্রতিশোধপরায়ণ ও একজন খুনির সাক্ষাৎকার নিয়ে আমি নিশ্চয়ই দেশে কিছু বিপথগামী পরাজিত আওয়ামী শক্তি বাহিনীকে উস্কে দিয়ে আরও বিপথগামী করতে পারি না!”

পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, তৃতীয় যে কারণে তার সাক্ষাৎকার আমি নেবো না তা হলো, শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের আহত করুক এমন কোনো কাজ আমি করতে পারি না।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার