Logo
Logo
×

জাতীয়

সাবেক বিবিসি সাংবাদিকের চোখে শেখ হাসিনার সাক্ষাতকার

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:০১ এএম

সাবেক বিবিসি সাংবাদিকের চোখে শেখ হাসিনার সাক্ষাতকার

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে সাক্ষাৎকারে দিয়েছেন আজ। সেখানে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি, দেশে ফেরা, নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ কয়েকটি বিষয়ে কথা বলেছেন।

শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিয়ে বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন বিবিসির প্রাক্তন সাংবাদিক শাকিল আনোয়ার।

স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘‘পশ্চিমা গণমাধ্যম রয়টার্স, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট এবং এএফপি-তে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারগুলো নিয়ে আমার কয়েকটি পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করছি।

প্রথমত, এগুলো প্রচলিত সাক্ষাৎকার ছিল না। এগুলো ছিল ই-মেইল করা প্রশ্নের স্পষ্ট লিখিত উত্তর- এমন একটি ফরম্যাট যা যাচাই-বাছাইকে সীমাবদ্ধ করে। তাই তার দাবিগুলি মূলত চ্যালেঞ্জহীন ছিল। যদিও সংবাদমাধ্যমগুলো পাল্টা অভিযোগ এবং প্রাসঙ্গিক অনুচ্ছেদ যুক্ত করে বিষয়গুলিকে ভারসাম্যপূর্ণ করার চেষ্টা করেছিল, তারা শেষ পর্যন্ত একটি আপস মেনে নিয়েছিল। সেটি হলো- তাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা ত্যাগ করার বিনিময়ে শেখ হাসিনার সাথে যোগাযোগের সুযোগ।

আরও লক্ষ্যণীয় যে, একই দিনে প্রকাশিত বেশিরভাগ অপরীক্ষিত সাক্ষাৎকারে বুঝা যায়, এগুলো স্বতঃস্ফূর্ত সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তের পরিবর্তে শেখ হাসিনার দলের দ্বারা সমন্বিত ছিল।

সাক্ষাৎকারগুলোয় নতুন বা নাটকীয় কোনো অবস্থান প্রকাশ পায়নি। তবে নভেম্বরের ট্রাইব্যুনালের রায় (যেখানে তার মৃত্যুদণ্ডের আশঙ্কা রয়েছে) সামনে রেখে তিনি কিছু নির্দিষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে মনে হয়।

প্রথমত শেখ হাসিনা জুলাই–আগস্টের হত্যাযজ্ঞ থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তিনি কখনোই বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর অনুমতি দেননি; বরং মাঠপর্যায়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারাই স্বাধীনভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে তার এই ব্যাখ্যা তার কট্টর সমর্থকদের বাইরে কতটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

দ্বিতীয়ত; শেখ হাসিনা কার্যত তার সমর্থকদের নির্বাচনে বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, দুর্বল ও নেতৃত্বহীন অবস্থায়ও আওয়ামী লীগ বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বৈধতা দিতে প্রস্তুত নয়। এটি এক অর্থে অনুপস্থিত থাকলেও রাজনৈতিক উপস্থিতি ধরে রাখার কৌশল।

তৃতীয়ত; শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, তিনি আপাতত ভারতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি একদিকে নিজেকে ‘নিপীড়িত’ হিসেবে উপস্থাপন করছেন, অন্যদিকে ‘কৌশলগত নির্বাসন’-এর ভঙ্গিতে দৃঢ়তা দেখাচ্ছেন। রাজনীতি থেকে শারীরিকভাবে দূরে থাকলেও প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখার এটাই তার প্রচেষ্টা।

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ তার পরিবারের নেতৃত্বনির্ভর নাও হতে পারে। যদিও তিনি প্রকাশ্যে এমন পরিবর্তনকে সমর্থন করেননি, তবু তা নাকচও করেননি। দলীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের পারিবারিক আধিপত্য থেকে এটি এক সূক্ষ্ম কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সরে আসা।

সমষ্টিগতভাবে দেখা যায়, শেখ হাসিনার এসব মন্তব্য এক বিপুল চাপে থাকা নেত্রীর রাজনৈতিক টিকে থাকার কৌশল।

তিনি অভিযোগের জবাব দিচ্ছেন, দূর থেকে রাজনৈতিক বৈধতা রক্ষা করছেন এবং একইসঙ্গে এমন একটি বর্ণনা তৈরি করছেন, যাতে তিনি নিজেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অবিচ্ছেদ্য, অবিচারগ্রস্ত অথচ দৃঢ়চেতা নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাখতে চান।

এই মুহূর্তে, শেখ হাসিনার এই অবস্থান যেন ‘আইনি প্রতিরক্ষা ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার’ উভয়কেই একসঙ্গে রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা।’’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার