ভাতা পাবেন প্রবীণ সাংবাদিকেরা, মানতে হবে যেসব শর্ত
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৮ এএম
অসচ্ছল প্রবীণ সাংবাদিকদের প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে সম্মানি দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী বছরের শুরু থেকে সাংবাদিকরা এই সুবিধা পাওয়া শুরু করবেন। এর জন্য প্রাথমিকভাবে ৫০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তহবিল গঠনের জন্য অর্থ প্রস্তাব করা হবে বলে জানিয়েছে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ওয়েবসাইটে ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদন জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র সরাসরি/ডাকযোগে/অনলাইনে জমা দেওয়া যাবে। তারপর যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে সুপারিশপ্রাপ্তরা সম্মানীর অর্থ পাবেন।
আবেদন করতে পারবেন যারা
যিনি একজন সার্বক্ষণিক সাংবাদিক এবং যিনি প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও নিবন্ধিত অনলাইন মিডিয়ার কাজে নিয়োজিত আছেন; নিয়মিতভাবে সাংবাদিকতা পেশায় নিযুক্ত থেকে সংবাদ সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, সম্পাদনা ও প্রকাশের কাজ করেন এবং এর মাধ্যমেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন; অক্ষম বয়স্ক সাংবাদিক যিনি বয়সের কারণে শারীরিক বা মানসিকভাবে কর্মক্ষম নন এবং দুর্ঘটনায় বা অন্য কোনো কারণে সাংবাদিকতা পেশায় সক্রিয়ভাবে কাজ করতে অক্ষম এবং দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছেন, কিন্তু এখন বয়সজনিত শারীরিক দুর্বলতা বা অন্যান্য কারণবশত আর পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।
যে প্রক্রিয়ায় সম্মানী প্রদান করা হবে
পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে ন্যূনতম ২৫ বছর সাংবাদিকতার প্রমাণ দিতে হবে; সরকার নিবন্ধিত কোনো সংবাদমাধ্যম থেকে এ সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র থাকতে হবে; প্রাথমিকভাবে প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা করে প্রবীণ সাংবাদিক সম্মানি ভাতা হিসেবে প্রদান করা হবে; সম্মানীপ্রাপ্ত সাংবাদিকের মৃত্যু হলে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে একক নমিনীর বরাবরে চার মাসের মোট অংকের টাকা এককালীন পরিশোধ করা হবে। অতঃপর ওই অ্যাকাউন্টে টাকা প্রেরণ বন্ধ করে দেওয়া হবে; ট্রাস্টের একটি নির্ধারিত ফরম থাকবে, তা পূরণ করে সংস্থার প্রধান বরাবরে পাঠাতে হবে। একটি বাছাই কমিটি এই আবেদনপত্র বাছাই ও বিবেচনা করবে; সুবিধাভোগীর তালিকা প্রণয়নের জন্য সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রচার এবং সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোতে বিজ্ঞপ্তির কপি পাঠাতে হবে।
যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন হবে
১. জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি;
২. শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত অনুলিপি;
৩. সংবাদমাধ্যমে চাকরিতে যোগদানের প্রমাণপত্র;
৪. বার্তা বিভাগ, সম্পাদনা ও সম্পাদকীয় বিভাগ ও ফটো/ভিডিও বিভাগসহ সাংবাদিক হিসেবে সংজ্ঞায়িত পদে ২৫ বছর কর্মরত থাকার প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি;
৫. অন্য কোনো প্রকার সরকারি মাসিক ভাতা/সম্মানী নিয়মিত গ্রহণ না করা সংক্রান্ত হলফনামা;
৬. সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি;
৭. জেলা প্রশাসক/সাংবাদিক ইউনিয়ন/প্রেসক্লাব সভাপতির প্রত্যয়নপত্র (যেকোনো একটি);
৮. প্রদত্ত ডকুমেন্টের তথ্য মিথ্যা ও প্রতারণামূলক প্রমাণিত হলে সম্মানীর অর্থ ফেরতযোগ্য এবং ওই ব্যক্তি ভবিষ্যতে সম্মানী পাওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন;
প্রার্থী বাছাই করতে যেসব বিষয় গুরুত্ব পাবে
প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে; পয়ষট্টি বা তদূর্ধ্ব বয়স্ক হতে হবে; যিনি শারীরিকভাবে কর্মক্ষম তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে; সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে; জন্ম নিবন্ধন/জাতীয় পরিচিতি নম্বর থাকতে হবে; বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ, এসএসসি/সমমান পরীক্ষার সনদপত্র বিবেচনা করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো বিতর্ক দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট কমিটির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই কমিটিতে যারা থাকবেন
সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সদস্য সচিব হিসেবে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট্রের উপপরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) থাকবেন। এছাড়া সদস্য হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রেস), সভাপতি/মহাসচিব/মনোনীত সাংবাদিক নেতা বা সদস্য একজন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একজন ও সরকার মনোনীত একজন সাংবাদিক।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যেখানে একজন মানুষ সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করেন। কিন্তু বয়স্ক হওয়ার পর পত্রিকা অফিস সেভাবে আর গুরুত্ব দেয় না। এই সময়ে সাংবাদিকরা এক ধরনের অসহায় হয়ে পড়েন। যার মধ্যে অনেকে আর্থিক সংকটে ভোগেন। তাই এই পেশার মানুষদের ন্যূনতম আর্থিক সহযোগিতার জন্য এই সম্মানীর বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।’
এই সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘সবকিছু প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। এখন শুধু মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দিলে আমরা সম্মানী দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করব। আগামী বছরের শুরু থেকে সাংবাদিকরা এই সুবিধা পাবেন বলে আশা করছি।’