দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না সদ্য যোগ দেওয়া ৩০০০ কনস্টেবল!

জাগো বাংলা ডেস্ক প্রকাশিত: ১২:৪০ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০২২
দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না সদ্য যোগ দেওয়া ৩০০০ কনস্টেবল!

দুই মাস ধরে বেতন হচ্ছে না সদ্য যোগ দেওয়া পুলিশ কনস্টেবলদের। বর্তমানে খুবই কষ্টে জীবনযাপন করছেন তারা। বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছেন না। উল্টো বাড়ি থেকে ধার করে টাকা এনে চলতে হচ্ছে তাদের।

গত দুই মাস ধরে বেতন না পাওয়া পুলিশ কনস্টেবলদের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। তারা জানান, ২০২১ সালে তিন হাজার সদস্যকে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। ২০২২ সালের জুলাই ও আগস্টে ধাপে ধাপে দেশব্যাপী পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে তারা যোগ দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রথম দুই মাসের বেতন পাননি তারা। কিছু সংখ্যক সদস্যের বেতন ঢুকলেও অক্টোবরের ১৮ তারিখ পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত অধিকাংশই এক টাকাও পাননি।

পুলিশের চট্টগ্রাম বিভাগে কর্মরত এক কনস্টেবল নাম প্রকাশ না করে জানান, ছয় মাসের ট্রেনিং শেষে তারা প্রায় ৩৭৫ জন চট্টগ্রাম রেঞ্জে যোগ দেন। এখন পর্যন্ত তাদের অনেকেই বেতন পাননি। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয়। অ্যাকাউন্ট খুলে তাদের নম্বর দিয়েছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও দিয়েছি। তবুও এতদিনে বেতন ঢুকেনি। বাড়ি থেকে টাকা এনে চলতে হচ্ছে। কেন বেতন হচ্ছে না—কারও কাছেই সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

ডিএমপির কূটনৈতিক নিরাপত্তা (ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি) বিভাগের এক কনস্টেবল জানান, আগস্টের মাঝামাঝি যোগ দেই। ওই সময় চাহিদা অনুযায়ী সব তথ্য ও কাগজপত্র জমা দেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত বেতন পাইনি। বাড়ি থেকে টাকা এনে চলতে হচ্ছে। আশ্বাস পেলেও বেতন পাচ্ছি না। এভাবে চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমরা ডিএমপি সদরদপ্তরে যোগাযোগ করেছি। তারা বলছে, ধাপে ধাপে সবার হয়ে যাবে। কিন্তু কারওই হয়নি।

পুলিশ সদরদপ্তরে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নতুন যোগ দেওয়া কনস্টেবলদের বেতন না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, ‘পে ফিক্সেশনের কারণে বিলম্ব হচ্ছে। একসঙ্গে অনেক নিয়োগ, সবার ডেটা এন্ট্রি করতে সময় লাগছে। এ কারণে তাদের বেতন হতেও দেরি হচ্ছে।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সদরদপ্তরের উপ-কমিশনার (ডিসি) আবদুল ওয়ারিশ বলেন, বর্তমানে পুলিশ সদস্যদের বেতন ইএফটি’র (ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) মাধ্যমে হচ্ছে। এজন্য ব্যক্তিগত কিছু তথ্য ইন্টিগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারে (আইবিএএস) এন্ট্রি দিতে হয়। এন্ট্রি দেওয়ার প্রক্রিয়াটা ফলো করতে একটু সময় লাগে। আমাদের এখানে ৩৭৫ জনের মধ্যে প্রায় ২৭০ জনের কাজ শেষ। বাকিদের এ মাসের (অক্টোবর) মধ্যেই সমন্বয় হবে বলে আশা করছি।

‘সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার বিষয়টি দেখে এজি (অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল) অফিস’ উল্লেখ করে আবদুল ওয়ারিশ বলেন, ‘কনস্টেবলরা যোগ দেওয়ার পর থেকে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাসহ বিভিন্ন কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লেগেছে। সেগুলো আবার বিভাগীয় হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। যারা বেতন পাননি, আশা করছি তারাও শিগগিরই পেয়ে যাবেন।’

তবে সদরদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমরা এজি অফিসে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছে, একসঙ্গে অনেকে যোগদান করেছেন। সবাইকে এন্ট্রি করতে একটু সময় লাগছে। জনবল সংকটও রয়েছে। ধীরে ধীরে সবাই পেয়ে যাবেন।

এ বিষয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান বলেন, ‘আইবিএএস প্লাস প্লাস সফটওয়্যারের কারণে বেতন দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।’

২০১৬ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করে। এতে ২০১৬ সাল থেকে সরকারি চাকরিতে যাদের নতুন নিয়োগ হয়েছে তাদের অনলাইনে বেতন নির্ধারণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ও অন্যান্য তথ্যসংবলিত একটি নির্ভুল ডেটাবেজ প্রস্তুত করা হচ্ছে। অনলাইন ব্যতীত নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো চাকরিজীবীর বেতন ও ভাতাদি পরিশোধ করা যাবে না।

পুলিশ বলছে, নিয়োগপ্রাপ্ত কনস্টেবলদের অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল ফোন নম্বর, বেতন নির্ধারণ সংক্রান্ত অফিস আদেশ, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, শিক্ষাগত সনদ, যোগদানপত্র, স্বাস্থ্যগত সনদ ইত্যাদির সফট কপি (পিডিএফ/জেপিইজি ফরমেট) আপলোড করতে হয়। এসব কাগজ (https://ibas.finance.gov.bd/) ওয়েবসাইটে দেওয়ার পর তার চূড়ান্ত অনুমোদন হয় এবং ইএফটি’র মাধ্যমে বেতন হয়।

২০২১ সালে বাংলাদেশ পুলিশে তিন হাজার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগের সার্কুলার হয়। নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২৫ অক্টোবর। ডিসেম্বরে তিন হাজার প্রার্থীর (পুরুষ ও নারী) নিয়োগ চূড়ান্ত হয়। ওই মাসেই তাদের ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয়। ট্রেনিং শেষে ২০২২ সালের জুলাই ও আগস্টে ধাপে ধাপে তাদের নিয়োগ হয়।