এয়ারবাসের সফটওয়্যার ত্রুটি, বিশ্বজুড়ে ফ্লাইটে বিঘ্ন ঘটার শঙ্কা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৫ এএম
এ৩২০ সিরিজের সংখ্যক উড়োজাহাজে তাৎক্ষণিকভাবে সফটওয়্যার হালনাগাদ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস। ফলে বিশ্বজুড়ে চলাচলকারী প্রতিষ্ঠানটির হাজারো উড়োজাহাজের চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ৩২০ হলো এয়ারবাসের ‘সর্বাধিক বিক্রি হওয়া’ যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের মডেল। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬ হাজার বিমানে প্রভাব পড়বে।
ফলে অর্ধেকেরও বেশি এ৩২০ ফ্লিটকে অস্থায়ীভাবে স্থগিত করতে পারে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপক ফ্লাইট বিলম্ব ও বাতিলের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এটিকে উড়োজাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে ‘খুবই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি’ বলছে বিবিসি।
এয়ারবাস জানিয়েছে, সূর্যরশ্মি থেকে সৃষ্ট তীব্র বিকিরণ উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নষ্ট করতে পারে—এমনটা শনাক্ত করার পর এয়ারলাইনসগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে উড়োজাহাজের সফটওয়্যার হালনাগাদ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ কারণে সফটওয়্যার পরিবর্তন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। এয়ারবাসের ঘোষণার পরপরই বিশ্বের আকাশে তখনও প্রায় ৩ হাজারটি এ৩২০ বিমান উড়ছিল।
৩০ অক্টোবর কানকুন থেকে নিউ জার্সির নিউয়ার্কগামী একটি জেটব্লু এ৩২০ বিমানে হঠাৎ নিচে নেমে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হন এবং বিমানটি জরুরি ভিত্তিতে ফ্লোরিডার টাম্পায় অবতরণ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের এফএএ-এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বিমানের দুই-তৃতীয়াংশে সফটওয়্যারকে আগের সংস্করণে ফিরিয়ে নিতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। তবে হাজারের বেশি বিমানে হার্ডওয়্যারও পরিবর্তন করতে হতে পারে। ইতোমধ্যে আমেরিকান এয়ারলাইন্স, উইজ এয়ার, লুফথানসা, ইন্ডিগো, ইজিজেটসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স মেরামত প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এরই মধ্যে সফটওয়্যার হালনাগাদের কাজ শেষ করার ঘোষণা দিয়েছে ইজিজেট।
প্রতিষ্ঠানটি বহরে থাকা এয়ারবাসের উড়োজাহাজ আজ স্বাভাবিকভাবে চালানোর পরিকল্পনা করেছে।
আমেরিকান এয়ারলাইন্স ও হাঙ্গেরির উইজ এয়ার জানিয়েছে, তাদের কোন কোন বিমান সফটওয়্যার আপডেটের প্রয়োজন তা তারা নির্ধারণ করে ফেলেছে। ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স বলেছে, তারা এ সমস্যার আওতায় পড়ে না।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ৩২০ অপারেটর আমেরিকান এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, তাদের ৪৮০টি এ৩২০ বিমানের মধ্যে প্রায় ৩৪০টিতে সফটওয়্যার পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। তারা আশা করছে, আজ ও আগামীকাল অধিকাংশ মেরামত সম্পন্ন করা যাবে এবং প্রতিটি বিমানে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগবে।
কলম্বিয়ার এভিয়াঙ্কা জানিয়েছে, তাদের ৭০ শতাংশ বিমানে প্রভাব পড়বে এবং আগামী ১০ দিন বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটবে। ফিনল্যান্ডের ফিনএয়ার, ফ্রান্সের এয়ার ফ্রান্স–কেএলএম ও মেক্সিকোর ভোলারিসও বিলম্ব ও বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে।
বিশ্বে বর্তমানে ১১ হাজার ৩০০টির বেশি এ৩২০ সিরিজের বিমান চলাচল করছে। এটি এয়ারবাসের ৫৫ বছরের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ সফটওয়্যার সংক্রান্ত মেরামত বলে মনে করা হচ্ছে।
সমস্যার উৎস ‘ইএলএসি’ নামের একটি ফ্লাইট–কন্ট্রোল কম্পিউটার, যা পাইলটের সাইড–স্টিক থেকে কমান্ড নিয়ে বিমানের পিচ বা নাকের দিক নিয়ন্ত্রণ করে। এয়ারবাসের এই সমস্যা এমন সময়ে দেখা দিল যখন এ৩২০ সিরিজ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সরবরাহকৃত বাণিজ্যিক বিমানের রেকর্ড গড়েছে। বোয়িং ৭৩৭–কেও ছাড়িয়ে গেছে।
সূত্র : আলজাজিরা, বিবিসি