গোপনে ‘বেলি ড্যান্স’ শিখছেন সৌদি নারীরা: এএফপির প্রতিবেদন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৫ পিএম
গোপনে ‘বেলি ড্যান্স’ শিখছেন সৌদি নারীরা। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এমনটাই দাবি করেছে। তাদের দাবি, সৌদি আরবের ফিটনেস স্টুডিওগুলোতে এই নাচ শেখার গোপন ক্লাস চলছে ও সেখানে অনেক নারীই অতি গোপনীয়তা বজায় রেখে অংশ নিচ্ছেন।
বেলি ড্যান্স মূলত একটি প্রাচীন নৃত্যরীতি, যা সৌদিতে এখনো নিষিদ্ধের মতোই গণ্য হয়।
এএফপি বলেছে, বেলি ড্যান্সের ক্লাসে অংশ নেওয়া নারীদের কারও আসল নাম প্রকাশ করা যায়নি ও কেউই নিজেদের মুখ দেখাতে রাজি হননি। কারণ এখনো সৌদি সমাজে বেলি ড্যান্স ঘিরে রয়েছে গভীর সামাজিক কুসংস্কার ও ট্যাবু।
আরব সংস্কৃতিতে এই নাচ বহু যুগ ধরে নানা অর্থ বহন করে আসছে। কখনো তা শিল্পের প্রকাশ, কখনো জনপ্রিয় বিনোদন কিংবা মিশরীয় চলচ্চিত্রের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের নানা প্রান্তে নারীরা একে গ্রহণ করেছেন ফিটনেস রুটিন ও ‘আত্মপ্রকাশের’ মাধ্যম হিসেবে। কিন্তু সৌদি আরবে নারীদের জন্য বিশেষভাবে আয়োজন করা ঘরোয়া ক্লাসও সমাজে এখনো ‘নিষিদ্ধ’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, আমরা একটি রক্ষণশীল সমাজে বাস করি। বেলি ড্যান্সকে অনেকে যৌন আবেদনময় কিছু মনে করেন। কোনো পরিবার বা স্বামীই মেনে নেবেন না যে পুরুষরা আমাদের এভাবে দেখুক।
ফরাসি বার্তা সংস্থা বহু মাসের চেষ্টার পর এই ক্লাসে প্রবেশ করতে পেরেছে। সৌদির রাজধানী রিয়াদে এমন ক্লাস অত্যন্ত ব্যক্তিগতভাবে আয়োজন করা হয় ও অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় কঠোরভাবে গোপন রাখা হয়।
বেশিরভাগ নারীই জানান, তাদের পরিবার বা বন্ধুরা বিষয়টি জানলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা নিয়েই ভয় কাজ করে।
এক নারী বলেন, আমি আমার পরিবারকে বলব না, তাদের মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা থেকে। তারা প্রবীণ।
সৌদিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু সামাজিক নিয়ম শিথিল হলেও, গভীর রক্ষণশীল মানসিকতা এখনো বিদ্যমান। সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো, নাচের সময় তাদের কোনো ছবি বা ভিডিও যেন বাইরে না যায়। এজন্য জিমের কর্মীরা কঠোরভাবে ফোন ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করেন।
এক নৃত্যশিল্পী বলেন, সবসময় একটা ভয় থাকে, কেউ হয়তো ভিডিও করে ক্ষতি করতে পারে। আরেকজন বলেন, আমি বাবাকে কখনো বলতে পারব না যে আমি বেলি ড্যান্স শিখছি। তিনি কোনোদিনই এটা মেনে নেবেন না।
সৌদি আরব হলো কঠোর সুন্নি মতবাদের জন্মভূমি, যা ইসলামী শরিয়াহর কঠোর ব্যাখ্যা মেনে চলে। তবে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে দেশটিতে কিছু পরিবর্তন এসেছে। নারীদের গাড়ি চালানো, পর্দা ত্যাগের স্বাধীনতা ও বিনোদনে অংশ নেওয়ার সুযোগ মিলেছে। তবুও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি কঠোরভাবে মেনে চলেন বেশিরভাগ মানুষ।
শতাব্দী প্রাচীন নৃত্যকলা বেলি ড্যান্স এখনো অনেকের কাছে অশালীন মনে হয়। কারও কাছে এটি যৌনতা বা পতিতাবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত, যদিও রিয়াদের ওই স্টুডিওর নারীরা এটি করছেন শুধুমাত্র ফিটনেস ও আত্ম-উন্নয়নের জন্য।
দুই প্রশিক্ষক নিজেদের ‘নৃত্যশিল্পী’ নয়, বরং ‘কোচ’ হিসেবে পরিচয় দেন। তারা একে শরীরচর্চার অংশ হিসেবেই তুলে ধরেন।
এক প্রশিক্ষক বলেন, আমরা নাচকে খেলাধুলায় রূপ দিয়েছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ‘ওনি’ নামে ভিডিও শেয়ার করেন, তবে সেখানে নিজের মুখ আড়াল করে রাখেন।
ওনি বলেন, সৌদিরা আনন্দ করতে ভালোবাসে, জীবনকে উপভোগ করতে চায়, তবে সবসময় ধর্মীয় মূল্যবোধ ও শালীনতার সীমা বজায় রেখে।
ওনি আরও বলেন, তাদের ক্লাস শুধু বিনোদন বা শরীরচর্চার জন্য নয়। এটি নারীদের আত্মবিশ্বাস ও ক্ষমতায়নের মাধ্যম। নাচ নারীদের মধ্যে একতা, শক্তি ও আত্মবিশ্বাস জাগায়। এটি শুধু শরীরের নয়, মনকেও মুক্ত করে।
অন্য প্রশিক্ষক, যিনি নিজেকে ‘রোরো’ নামে পরিচয় দেন। বলেন, আমরা সবাই এখানে মজা করি। এটা মানসিক চাপ মুক্তির এক দারুণ উপায়।
রিয়াদে এখন শুধু বেলি ড্যান্স নয়, নারীদের জন্য যোগব্যায়াম ও বক্সিং ক্লাসও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, যা এক সময় পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল। তবে এখনো জিম ও স্টুডিওগুলো পুরুষ ও নারীদের জন্য কঠোরভাবে আলাদা রাখা হয়।
সঙ্গীত ও নৃত্যবিষয়ক গবেষক জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিসা উরকেভিচ বলেন, বেলি ড্যান্স মূলত আরব উপদ্বীপের বাইরের সংস্কৃতি থেকে এসেছে। এটি আঞ্চলিক নাচের তুলনায় কিছুটা বেশি ‘উসকানিমূলক’, তাই অনেক পরিবার মেয়েদের এটি প্রকাশ্যে করতে দিতে চায় না।
তবে তিনি যোগ করেন, সৌদি আরব একটি বড় ও বৈচিত্র্যময় দেশ। পরিবারের ভেতরেও নারীদের নাচ নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন ভিন্ন।
সূত্র: এএফপি
বেলি ড্যান্স মূলত একটি প্রাচীন নৃত্যরীতি, যা সৌদিতে এখনো নিষিদ্ধের মতোই গণ্য হয়।
এএফপি বলেছে, বেলি ড্যান্সের ক্লাসে অংশ নেওয়া নারীদের কারও আসল নাম প্রকাশ করা যায়নি ও কেউই নিজেদের মুখ দেখাতে রাজি হননি। কারণ এখনো সৌদি সমাজে বেলি ড্যান্স ঘিরে রয়েছে গভীর সামাজিক কুসংস্কার ও ট্যাবু।
আরব সংস্কৃতিতে এই নাচ বহু যুগ ধরে নানা অর্থ বহন করে আসছে। কখনো তা শিল্পের প্রকাশ, কখনো জনপ্রিয় বিনোদন কিংবা মিশরীয় চলচ্চিত্রের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের নানা প্রান্তে নারীরা একে গ্রহণ করেছেন ফিটনেস রুটিন ও ‘আত্মপ্রকাশের’ মাধ্যম হিসেবে। কিন্তু সৌদি আরবে নারীদের জন্য বিশেষভাবে আয়োজন করা ঘরোয়া ক্লাসও সমাজে এখনো ‘নিষিদ্ধ’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, আমরা একটি রক্ষণশীল সমাজে বাস করি। বেলি ড্যান্সকে অনেকে যৌন আবেদনময় কিছু মনে করেন। কোনো পরিবার বা স্বামীই মেনে নেবেন না যে পুরুষরা আমাদের এভাবে দেখুক।
ফরাসি বার্তা সংস্থা বহু মাসের চেষ্টার পর এই ক্লাসে প্রবেশ করতে পেরেছে। সৌদির রাজধানী রিয়াদে এমন ক্লাস অত্যন্ত ব্যক্তিগতভাবে আয়োজন করা হয় ও অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় কঠোরভাবে গোপন রাখা হয়।
বেশিরভাগ নারীই জানান, তাদের পরিবার বা বন্ধুরা বিষয়টি জানলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা নিয়েই ভয় কাজ করে।
এক নারী বলেন, আমি আমার পরিবারকে বলব না, তাদের মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা থেকে। তারা প্রবীণ।
সৌদিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু সামাজিক নিয়ম শিথিল হলেও, গভীর রক্ষণশীল মানসিকতা এখনো বিদ্যমান। সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো, নাচের সময় তাদের কোনো ছবি বা ভিডিও যেন বাইরে না যায়। এজন্য জিমের কর্মীরা কঠোরভাবে ফোন ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করেন।
এক নৃত্যশিল্পী বলেন, সবসময় একটা ভয় থাকে, কেউ হয়তো ভিডিও করে ক্ষতি করতে পারে। আরেকজন বলেন, আমি বাবাকে কখনো বলতে পারব না যে আমি বেলি ড্যান্স শিখছি। তিনি কোনোদিনই এটা মেনে নেবেন না।
সৌদি আরব হলো কঠোর সুন্নি মতবাদের জন্মভূমি, যা ইসলামী শরিয়াহর কঠোর ব্যাখ্যা মেনে চলে। তবে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে দেশটিতে কিছু পরিবর্তন এসেছে। নারীদের গাড়ি চালানো, পর্দা ত্যাগের স্বাধীনতা ও বিনোদনে অংশ নেওয়ার সুযোগ মিলেছে। তবুও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি কঠোরভাবে মেনে চলেন বেশিরভাগ মানুষ।
শতাব্দী প্রাচীন নৃত্যকলা বেলি ড্যান্স এখনো অনেকের কাছে অশালীন মনে হয়। কারও কাছে এটি যৌনতা বা পতিতাবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত, যদিও রিয়াদের ওই স্টুডিওর নারীরা এটি করছেন শুধুমাত্র ফিটনেস ও আত্ম-উন্নয়নের জন্য।
দুই প্রশিক্ষক নিজেদের ‘নৃত্যশিল্পী’ নয়, বরং ‘কোচ’ হিসেবে পরিচয় দেন। তারা একে শরীরচর্চার অংশ হিসেবেই তুলে ধরেন।
এক প্রশিক্ষক বলেন, আমরা নাচকে খেলাধুলায় রূপ দিয়েছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ‘ওনি’ নামে ভিডিও শেয়ার করেন, তবে সেখানে নিজের মুখ আড়াল করে রাখেন।
ওনি বলেন, সৌদিরা আনন্দ করতে ভালোবাসে, জীবনকে উপভোগ করতে চায়, তবে সবসময় ধর্মীয় মূল্যবোধ ও শালীনতার সীমা বজায় রেখে।
ওনি আরও বলেন, তাদের ক্লাস শুধু বিনোদন বা শরীরচর্চার জন্য নয়। এটি নারীদের আত্মবিশ্বাস ও ক্ষমতায়নের মাধ্যম। নাচ নারীদের মধ্যে একতা, শক্তি ও আত্মবিশ্বাস জাগায়। এটি শুধু শরীরের নয়, মনকেও মুক্ত করে।
অন্য প্রশিক্ষক, যিনি নিজেকে ‘রোরো’ নামে পরিচয় দেন। বলেন, আমরা সবাই এখানে মজা করি। এটা মানসিক চাপ মুক্তির এক দারুণ উপায়।
রিয়াদে এখন শুধু বেলি ড্যান্স নয়, নারীদের জন্য যোগব্যায়াম ও বক্সিং ক্লাসও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, যা এক সময় পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল। তবে এখনো জিম ও স্টুডিওগুলো পুরুষ ও নারীদের জন্য কঠোরভাবে আলাদা রাখা হয়।
সঙ্গীত ও নৃত্যবিষয়ক গবেষক জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিসা উরকেভিচ বলেন, বেলি ড্যান্স মূলত আরব উপদ্বীপের বাইরের সংস্কৃতি থেকে এসেছে। এটি আঞ্চলিক নাচের তুলনায় কিছুটা বেশি ‘উসকানিমূলক’, তাই অনেক পরিবার মেয়েদের এটি প্রকাশ্যে করতে দিতে চায় না।
তবে তিনি যোগ করেন, সৌদি আরব একটি বড় ও বৈচিত্র্যময় দেশ। পরিবারের ভেতরেও নারীদের নাচ নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন ভিন্ন।
সূত্র: এএফপি