ব্রিটেনে আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসনে বিশৃঙ্খলা, শত কোটি পাউন্ড অপচয়
ইনফোমাইগ্রেন্টস
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২৩ এএম
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা পরিচালনায় দীর্ঘদিন ধরে “ব্যর্থ, বিশৃঙ্খল ও ব্যয়বহুল” নীতিতে চলায় কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড অপচয় করেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটি৷
সোমবার (২৭ অক্টোবর) প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, সরকার একের পর এক হোটেল, পুরনো সামরিক ঘাঁটি ও যৌথ আবাসন ব্যবস্থাপনায় ব্যয় ও চুক্তি পর্যবেক্ষণে চরম ব্যর্থতা দেখিয়েছে৷
প্রতিবেদনটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, হোম অফিস ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ’ এবং ‘উচ্চ পর্যায়ে নেতৃত্বের ঘাটতি’ স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে৷
২০১৯ সালে শুরু হওয়া ১০ বছরের আবাসন চুক্তিগুলোর (যেমন: ক্লিয়ারস্প্রিংস, মিয়ার্স ও সারকো) আর্থিক অনিয়ম নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কমিটি৷ চুক্তিগুলোর মোট মূল্য চার দশমিক ৫ বিলিয়ন পাউন্ড থেকে বেড়ে ১৫ দশমিক ৩ বিলিয়নে পৌঁছেছে৷
প্রতিবেদনে অনুসারে, বাজেট বাড়লেও আবাসন ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত তদারকি ছিল না৷
এতে আরো বলা হয়েছে, হোটেল খাতে মোট আশ্রয় ব্যয়ের ৭৫ শতাংশেরও বেশি খরচ হয়েছে৷ কিন্তু কর্মদক্ষতার কোনো মূল্যায়ন হয়নি, কোনো জরিমানাও আরোপ করা হয়নি৷ নেপিয়ার ব্যারাকস বা ওয়েদার্সফিল্ডের মতো আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি সরকার৷
মিয়ার্স ১৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন এবং ক্লিয়ারস্প্রিংস ৩২ মিলিয়ন পাউন্ড ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও স্বরাষ্ট্র দপ্তর এখনও নিরীক্ষা শেষ করতে পারেনি৷
প্রতিবেদনটি আরো বলেছে, আশ্রয়প্রার্থীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় গুরুতর ব্যর্থতা আছে৷ শিশুদের প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে ভুলভাবে চিহ্নিত করে প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে রাখার ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে এতে৷
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে পূর্ব সাসেক্সের বেক্সহিলে ১৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনা নর্থআই এস্টেট এক বছর আগেই মাত্র ৬ দশমিক ৩ মিলিয়নে বিক্রি হয়েছিল৷ পরে দেখা যায়, জায়গাটি দূষিত এবং ব্যবহার অযোগ্য৷
লিংকনশায়ারের আরএএফ স্ক্যাম্পটনে ৪৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করা হয়৷ পরে সেই প্রকল্পও বাতিল করা হয়, আশ্রয়প্রার্থীরা সেখানে পৌঁছানোর আগেই৷ একটি ঘটনায় দেখা গেছে, ২৪৪টি বেডের ভুয়া বিল পরিশোধ করা হয়েছে৷
অন্যদিকে, রুয়ান্ডা পুনর্বাসন পরিকল্পনায় শত শত মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় হয়েছে, যার মধ্যে ২৯০ মিলিয়ন পাউন্ড সরাসরি রুয়ান্ডা সরকারকে দেয়া হয়েছে৷ অথচ মাত্র চার জন আশ্রয়প্রার্থী স্বেচ্ছায় সেখানে গেছেন৷
গড়ে যৌথ আবাসনে একজন আশ্রয়প্রার্থীর রাতপ্রতি ব্যয় ২৩ পাউন্ড ২৫ পেনি৷ কিন্তু হোটেলে সেই ব্যয় প্রায় ১৪৫ পাউন্ড অর্থাৎ ছয় গুণেরও বেশি৷
ক্লিয়ারস্প্রিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্টিভ ল্যাকি সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছেন, হোটেলগুলো তাদের জন্য অন্যান্য আবাসনের তুলনায় বেশি লাভজনক।
কমিটি বলেছে, “এতে কোম্পানিগুলোর হোটেল থেকে অভিবাসীদের সরিয়ে নেওয়ার কোনো আগ্রহ নেই।”
কমিটির চেয়ার ডেম ক্যারেন ব্র্যাডলি বলেছেন, “স্বরাষ্ট্র দপ্তর এক ব্যর্থ আশ্রয় ব্যবস্থা চালিয়ে আসছে, যা করদাতাদের বিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতির মুখে ফেলেছে। বাড়তি চাহিদার প্রতিক্রিয়ায় তাদের পদক্ষেপ হয়েছে তাড়াহুড়া ও বিশৃঙ্খল। সরকারকে এখনই ব্যয় কমাতে হবে এবং চুক্তি অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে৷’’
তিনি আরো বলেন, “অতিরিক্ত ব্যয় কমানো এবং স্থানীয় জনগণের উদ্বেগ দূর করতে জরুরি পদক্ষেপ দরকার৷ সরকার যদি শুধু জনপ্রিয়তার জন্য হোটেল বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না নিলে তাহলে ভবিষ্যতে আবারও ব্যর্থতা আসবে৷’’
ব্রিটিশ রেড ক্রস বলেছে, এই প্রতিবেদনটি আমাদের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণই নিশ্চিত করছে৷ আশ্রয়প্রার্থীদের অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং অনেক সময় তাদের মৌলিক চাহিদাও পূরণ হয় না৷শরণার্থী কাউন্সিলের প্রধান এনভার সলোমন বলেন, “হোটেল কখনোই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারে না। যেসব দেশের আশ্রয় আবেদন সফলতার হার বেশি, সেই দেশগুলোর আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করলে সরকার ২০২৬ সালের মধ্যেই ব্যয়বহুল হোটেল ব্যবস্থার ইতি টানতে পারে৷’’