Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

পাঁচশ পাউন্ড দিয়ে দোষী সাব্যস্ত কেবাতুকে যুক্তরাজ্য থেকে বহিষ্কার

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৪ এএম

পাঁচশ পাউন্ড দিয়ে দোষী সাব্যস্ত কেবাতুকে যুক্তরাজ্য থেকে বহিষ্কার

এক শিশু ও নারীকে যৌন হয়রানির অপরাধে দণ্ডিত অভিবাসী হাদুশ কেবাতুকে নিজ দেশ ইথিওপিয়ায় জোরপূর্বক ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাজ্য৷

বুধবার সকালে যুক্তরাজ্য ছেড়েছেন তিনি৷ যুক্তরাজ্য ছেড়ে যাওয়ার সময় তাকে পাঁচশ পাউন্ড দিয়েছে সরকার৷  

ব্রিটিশ হোম অফিস বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাদুশ কেবাতু বুধবার সকালে ইথিওপিয়ায় ফিরে গেছেন৷ এর আগে গত সপ্তাহে ভুলবশত তাকে যুক্তরাজ্যের একটি কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল৷ এই ভুলের কারণে বিব্রত হয়েছে সরকার৷

বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে জুনিয়র মন্ত্রী অ্যালেক্স নরিস বলেন, ‘‘তাকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তটি খুবই সঠিক৷ তাকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয়েছে৷’’

মন্ত্রী আরো বলেছেন, মঙ্গলবার রাতে পাঁচ জন নিরাপত্তারক্ষীর তত্ত্বাবধানে তাকে ফ্লাইটে তোলা হয়৷ সেখানেও গণ্ডগোলের চেষ্টা করেছেন কেবাতু এবং ‘‘ফ্লাইট বিঘ্নিত করার হুমকি’’ দিয়েছেন৷

তাই কেবাতুকে ‘‘পাঁচশ পাউন্ড অর্থ দেয়ার একটি কার্যকর সিদ্ধান্ত’’ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ বলেছেন, ব্রিটিশ সরকারের অভিবাসী প্রত্যাবর্তন প্রকল্পের আওতায় দেড় হাজার পাউন্ড দাবি করেছিলেন কেবাতু৷

৩৮ বছর বয়সি হাদুশ কেবাতু চলতি বছর ফরাসি উপকূল থেকে ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে এসেছিলেন যুক্তরাজ্যে৷ আশ্রয় চেয়ে আবেদনের পর তাকে রাখা হয়েছিল লন্ডনের কাছের শহর এপিংয়ের বেল হোটেলে৷ দিন কয়েকের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে এক শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়৷ ওই ঘটনা উসকে দেয় দেশটির অভিবাসনবিরোধী মনোভাবকে৷ হোটেল থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের সরিয়ে নিতে এপিংয়ে শুরু হয় অভিবাসনবিরোধী সমাবেশ৷

যৌন হয়রানির অভিযোগে কেবাতুকে ৮ জুলাই গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ তাতেও থামেনি বিক্ষোভ৷ বেল হোটেলের সামনে কয়েক দফা বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা৷ পাল্টা সমাবেশ করেন বর্ণবাদ বিরোধীরাও৷ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দেশটির অন্যান্য শহরেও৷ অভিবাসনবিরোধী মনোভাব আরো তীব্র হতে থাকে৷ হোটেল থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের সরিয়ে নেয়ার দাবি উঠে৷ রাজনৈতিক চাপে পড়ে সরকার৷

এদিকে, সেপ্টেম্বরে শেষ হয় কেবাতুর বিচার কাজ৷ শিশু ও নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে কেবাতুকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত৷ সাজার অংশ হিসেবে তাকে পাঠানো হয় চেমসফোর্ডের কারাগারে৷ কিন্তু গত কিন্তু ২৪ অক্টোবর কারাগার থেকে ভুলবশত ছাড়া পেয়ে যায় ওই দণ্ডিত অপরাধী৷ ভুল বুঝতে পারার পর কেবাতুকে গ্রেপ্তারে শুরু হয় অভিযান৷

পরদিন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমান্ডার জেমস কনওয়ে বলেন, ‘‘আমি সরাসরি মিস্টার কেবাতুর উদ্দেশে একটা কথা বলতে চাই৷ আপনাকে নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিতভাবে খুঁজে বের করতে চাই আমরা৷ অভিবাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় আপনি ইথিওপিয়ায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন৷ আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করাটাই আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে৷ ৯৯৯ নম্বরে ফোন করুন অথবা কোনো পুলিশ স্টেশনে গিয়ে ধরা দিন৷’’

কারা কর্তৃপক্ষের এমন অসতর্ক আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ব্রিটিশ বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত যে কেবাতু এখনও পলাতক৷ যৌন নিপীড়নের ঘটনার পরই তাকে ইথিওপিয়ায় ফেরত পাঠানো উচিত ছিল৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘এখন এসেক্স পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ তাকে খুঁজে বের করার জন্য যৌথভাবে অভিযান চালাচ্ছে৷ আমরা জানি তিনি একটি ট্রেনে উঠেছেন এবং এখন লন্ডনে পলাতক অবস্থায় আছেন৷ আমি ঘটনার পূর্ণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি এবং একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷’’

দুই দিনের পুলিশি অভিযানের পর ২৬ অক্টোবর কেবাতুকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে৷ কমান্ডার জেমস কনওয়ে জানিয়েছেন, উত্তর লন্ডনের ফিন্সবুরি পার্ক থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এরপরই তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলো৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কেবাতুর ‘‘যুক্তরাজ্যে ফেরার আর কোনো অধিকার নেই৷’’

গত কয়েক দিনে অভিবাসন সংক্রান্ত একাধিক ঘটনা চাপে ফেলেছে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও তার লেবার সরকারকে৷ লন্ডনের পশ্চিমে ইউক্সব্রিজ শহরে সোমবার দিনের আলোতে ছুরিকাঘাতে একজন নিহত ও ১৪ বছর বয়সি এক কিশোরসহ দুই জন আহত হয়েছেন৷ ওই ঘটনায় তদন্ত করছে লন্ডন পুলিশ৷

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হামলার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তিনি আফগান নাগরিক৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, ওই সন্দেহভাজন আফগান ২০২২ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে বৈধভাবে বসবাস করছেন৷

হোম অফিস জানিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি ২০২০ সালে একটি ট্রাকে করে যুক্তরাজ্যে এসে আশ্রয় আবেদন করেন৷ ২০২২ সালে তার আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর করা হয়৷

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, সন্দেহভাজন ওই আফগান একজন আশ্রয়প্রার্থী এবং তাকে হোটেলে রাখা হয়েছে৷

হোম অফিস জানিয়েছে, ওই সন্দেহভাজন আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত কোনো হোটেল বা সরকারি আবাসন সুবিধায় ছিলেন না৷ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো এ তথ্য ভূয়া৷

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার