Logo
Logo
×

সারাদেশ

সিলেটের ‘মিনিস্টার বাড়ি’ ভাঙারির ভাঁজে বিক্রি!

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০২:০৯ এএম

সিলেটের ‘মিনিস্টার বাড়ি’ ভাঙারির ভাঁজে বিক্রি!

সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকার শতবর্ষী ঐতিহ্যের নিদর্শন ‘মিনিস্টার বাড়ি’ এখন হাতুড়ি-শাবলের আঘাতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের ভাষায়, এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি কেবল একটি ভবন নয়, এটি সিলেটের ইতিহাস ও স্থাপত্য ঐতিহ্যের এক জীবন্ত সাক্ষী। অথচ মালিকপক্ষ ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ার অজুহাতে ঐতিহাসিক এ বাড়িটি ভেঙে ফেলছে।

জানা গেছে, বাড়িটি মাত্র ১৮ লাখ টাকায় এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়েছে এবং তারাই শ্রমিক লাগিয়ে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন।

এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি রক্ষার দাবিতে শনিবার ‘পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্ট’-এর উদ্যোগে মিনিস্টার বাড়ির সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা সরকারের কাছে বাড়িটি সংরক্ষণের জোর দাবি জানান। তারা বলেন, মিনিস্টার বাড়ি কেবল একটি ভবন নয়— এটি আসাম আমলের ইতিহাসের সাক্ষ্য, প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর প্রতীক।

মানববন্ধনে অংশ নেন পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, স্থপতি রাজন দাশ, পরিবেশ সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’–এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিমসহ শিক্ষক, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

আশরাফুল কবির বলেন, পরিবারের সদস্যরা চাইলে এই ঐতিহ্যবাহী ভবনটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করা যেত। দুঃখজনক যে এটি এখন ধ্বংসের মুখে।

আব্দুল করিম কিম বলেন, সিলেটে ঐতিহ্যবাহী পুরনো স্থাপনা নেই বললেই চলে। নতুন করে আরেকটি স্থাপনা ভেঙে ফেলা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি ইতিহাস ও স্থাপত্যশৈলীর এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য ছিল।

এর আগে শুক্রবার সকালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গবেষণা সহকারী মো. ওমর ফারুক মিনিস্টার বাড়িটি পরিদর্শন করেন এবং ভাঙার কাজ আজ রোববার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে পরদিনই পুনরায় ভাঙার কাজ শুরু হয় বলে অভিযোগ করেছে পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্ট।

বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ আব্দুল হামিদ— যিনি ব্রিটিশ ভারতের আসাম ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর কারণেই এ বাড়িটি ‘মিনিস্টার বাড়ি’ নামে পরিচিত হয়।

এই বাড়িতে একসময় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বহু খ্যাতিমান ব্যক্তির পদধূলি পড়েছিল।

স্থানীয়রা জানান, বাড়িটির ছাদে ফাটল দেখা দেওয়ায় এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আব্দুল হামিদের নাতি আনিসুল ইসলাম বলেন, “ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, তাই নিরুপায় হয়ে ভাঙতে হচ্ছে। ভাঙতে আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে।” শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ বাড়িটি ভাঙতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে।

সিলেটের ইতিহাসবিদদের মতে, প্রায় শতবর্ষী এই স্থাপনাটি আসাম ও পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ঐতিহ্যপ্রেমীরা মনে করেন, সংস্কার ও সংরক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

উল্লেখ্য, আব্দুল হামিদ ছিলেন তৎকালীন আসামের এমএলএ ও শিক্ষামন্ত্রী। পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বোন হাফিজা বানু ছিলেন আইনজীবী আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের মা এবং বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের দাদি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার