লুঙ্গি বিক্রি করে স্বামীর জন্য ওষুধ-খাবার কিনলেন নিঃস্ব রহিমা

জাগো বাংলা ডেস্ক প্রকাশিত: ০৭:৪১ এএম, ১৭ অক্টোবর ২০২২
লুঙ্গি বিক্রি করে স্বামীর জন্য ওষুধ-খাবার কিনলেন নিঃস্ব রহিমা

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রাম খেয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা রহিমা বেগম। সাত মাস আগে তার স্বামী লিটন তালুকদারের লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে। এরপর থেকেই গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন তার স্বামী। সাত মাস ধরে স্বামীর চিকিৎসা খরচ বহন করে অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন রহিমা। ওষুধ ও খাবার কেনার টাকাও নেই তার।

রোববার (১৬ আক্টোবর) দুপুরে হাসপাতালের পাশের শয্যায় এক রোগীকে চিড়া খেতে দেখেন অসুস্থ রহিমার স্বামী লিটন তালুকদার। ক্ষুধার যন্ত্রণায় তার কাছে চিড়া খেতে চাইলে দিতে অনীহা প্রকাশ করেন ওই রোগী। মন খারাপ হয়ে যায় রহিমার স্বামীর। এটা দেখে রহিমা হাসপাতাল থেকে হেঁটে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাড়িতে গিয়ে জাকাত হিসেবে পাওয়া একটি লুঙ্গি প্রতিবেশীর কাছে ২০০ টাকায় বিক্রি করে স্বামীর জন্য ওষুধ ও খাবার নিয়ে আসেন।

রহিমা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রাম খেয়াঘাট এলাকার লিটন তালুকদারের স্ত্রী । তাদের ১২ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। পরিবারে উপার্জনক্ষম কোনো ব্যক্তি নেই। তারা থাকেন অন্যের দেওয়া একটি ঘরে।

রহিমা বেগম বলেন, গত দুই দিন ধরে না খেয়ে আছি। দুপুরে পাশের বেডের এক রোগীর চিড়া খাওয়া দেখে আমার স্বামীও খাইতে চায়। ওই রোগী চিড়া না দিলে আমি হেঁটে বাড়ি যাই। বাড়িতে গিয়ে দেখি বিক্রি করার মতো কিছুই নেই। ঈদে এলাকার একজন আমার স্বামীকে একটা লুঙ্গি দান করেছিলেন। তা পাশের বাড়ির একজনের কাছে ২০০ টাকা বিক্রি করে স্বামীর জন্য খাবার ও ওষুধ কিনে নিয়ে যাই।

তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী গত সাত মাস ধরে লিভার সিরোসিস রোগে ভুগছেন। ডাক্তার বলেছেন- আমার স্বামীর ৯৫ ভাগ লিভার অকেজো হয়ে গেছে। দ্রুত উন্নত চিকিৎসা না করাতে পারলে বাঁচানো সম্ভব না। কিন্তু চিকিৎসা করানোর টাকা আমাদের নেই। টাকার অভাবে দুই দিন ধরে না খেয়ে আছি। কিছু দিন এলাকাবাসী ২০-৫০ টাকা দিলেও এখন আর দেয় না। উপার্জনের মতো আমাদের কেউ নেই। এক মেয়েকে নিয়ে আমি কই যাব এখন। আল্লাহ ছাড়া এখন আর আমার কেউ নাই। স্বামীকে বাঁচানোর জন্য যদি আমার দুইটা কিডনিই বিক্রি করতে হয় তাও আমি রাজি।

লুঙ্গির ক্রেতা বলেন, দুপুরে রহিমা আমার কাছে আসছিল একটা লুঙ্গি নিয়ে। এসে বলল আমাকে ২০০ টাকা দেন। ওর স্বামী ছয়-সাত মাস অসুস্থ। থাকে পরের জায়গায়। আমি ওরে ২০০ টাকা দিয়ে দিলাম।

রঘুনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শ্রীবাশ বিশ্বাস বলেন, লিটন তালুকদার যদিও আমার ভোটার না। সেক্ষেত্রে আমি আমার ব্যক্তিগতভাবে তাকে সাহায্য করতে পারি।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সাজেদুল ইসলাম বলেন, রহিমার ঘটনা শুনে খুবই খারাপ লাগে। সমাজের বিত্তবানরা যদি এখন একটু এগিয়ে আসে তাহলে হয়তো রহিমার স্বামী বেঁচে যেত।

রহিমাকে ফ্রিতে ব্লাড ব্যাগ দেওয়া নুর মেডিকেল ফার্মেসির মালিক আব্দুর রহমান সুমন বলেন, রহিমাকে আমি ছয় মাস ধরে ব্লাড ব্যাগ ফ্রিতে দেই। তার কেনার সামর্থ্য নেই। আল্লাহর কাছে দোয়া করি রহিমার স্বামী সুস্থ হয়ে যাক।

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাজমুল আলম জানান, লিটন তালুকদার শুধু লিভার সিরোসিস নয়, তার নানান রোগ রয়েছে। তার সারা শরীরে ঘা রয়েছে। আমরা ক্যান্সারের আশঙ্কা করছি। আমার মনে হচ্ছে তিনি মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসিন খান বলেন, আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।